ইউটিউব চ্যানেল এর জন্য নিশ বাছাই করুন

 আপনি হয়ত ইউটিউবে নতুন । আপনার নতুন চ্যানেলের জন্য কি নিশ সিলেক্ট করবেন তা নিয়ে হয়ত এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। নতুন ইউটিউবারদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে নিশ খুজে বের করা। আবার অনেকে এমন সব নিশ খুজে নেন যার মাধ্যমে সফলতা আসে না। 

ইউটিউব চ্যানেল এর জন্য নিশ বাছাই করুন

আজকে আপনাকে জানাবো ১২ টি নিশ আইডিয়া যা আপনাকে আপনার চ্যানেলের জন্য নিশ বাছাই করতে সাহায্য করবে।

টেকনোলজিঃ আপনি যদি ইউটিউব থেকে ভালো অংকের টাকা আয় করতে চান তবে টেকনোলজি নিশ আপনার জন্য একটি পারফেক্ট চয়েজ হতে পারে। বিভিন্ন প্রযুক্তির খবর, টিউটোরিয়াল, আনবক্সিং, প্রযুক্তি পণ্যের রিভিউ নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপনি আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন। আপনি যদি টেকনোলজি নিশ নিয়ে ইংরেজি ভাষায় ভিডিও বানাতে পারেন তাহলে এই নিশ থেকে খুব ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন। বাংলা ভাষায়ও আপনি টেকনোলজি নিশ নিয়ে কাজ করতে পারেন। টেকনোলজি নিশের চ্যানেলগুলো খুব তারাতারি জনপ্রিয় হয়। Unbox Therapy, Linus Tech Tips, Marques Brownlee এই চ্যানেলগুলি টেকনোলজি নিশ চ্যানেল, এই চ্যানেলগুলি থেকে আইডিয়া নিতে পারেন।

গেমিংঃ ধরুন আপনি গেম খেলতে পছন্দ করেন তবে গেমিং নিশ হতে পারে আপনার জন্য একটি পারফেক্ট চয়েজ। আপনার খেলা বিভিন্ন গেমের স্ক্রিন রেকর্ড করে পাশাপাশি আপনার ভয়েস দিয়ে, গেম লাইভ করে ও বিভিন্ন গেমিং ভিডিও বানিয়ে আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন। এমন অনেক গেমিং চ্যানেল আছে যারা শুধুমাত্র তাদের খেলা গেমিং ভিডিও থেকে প্রচুর ভিউ পাচ্ছে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে। PewDiePie, ElRubiusOMG, Fernanfloo এই চ্যানেলগুলি কয়েকটি টপ গেমিং চ্যানেল। এই চ্যানেলগুলি থেকে গেমিং ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন।

PewDiePie চ্যানেলটি ইউটিউবের শীর্ষ আয় করা চ্যানেলের মধ্যে একটি এবং সাবস্ক্রাইবারের দিক থেকে ২য় ।

ফুডঃ ধরুন আপনি খেতে খুব ভালোবাসেন বা আপনি একজন ভোজন রসিক তবে আপনি ফুড নিশ নিয়ে আপনার চ্যানেল শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন খাবারের রিভিউ, স্ট্রিট ফুড, বিভিন্ন খাবারের রেসিপি ইত্যাদি নিয়ে আপনি আপনার চ্যানেলটি শুরু করতে পারেন। মেয়েদের জন্য এই নিশটি একটি সেরা নিশ হতে পারে, কারন বিভিন্ন খাবারের রেসিপি নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে আপনার চ্যানেলটিকে খুব দ্রুত জনপ্রিয় করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজন মেয়ে রেসিপি নিয়ে চ্যানেল খুলে খুব ভালো আয় করছে। ফুড রিভিউয়ের জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় চ্যানেল হচ্ছে The Food Ranger, Mark Wiens এই চ্যানেলগুলি থেকে ফুড ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন।

ব্লগিংঃ আপনি যদি ইউটিউবে নতুন হন তবে এই নিশটি আপনার জন্য সেরা একটি নিশ হতে পারে কারন এই নিশ নিয়ে কাজ করতে গেলে আলাদা কোন দক্ষতার প্রয়োজন নেই। আপনার দৈনন্দিন জীবন, নিজের মতামত, আপনার ঘোরাফেরা, আপনার ভালোলাগা খারাপ লাগা ইত্যাদি নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে আপনার চ্যানেলটি শুরু করতে পারেন। শুধু নিজের মোবাইল ক্যামেরা ব্যাবহার করেই এমন একটি চ্যানেল দাড়া করানো সম্ভব। Logan Paul, Dude Perfect এই চ্যানেলগুলি কয়েকটি জনপ্রিয় ব্লগিং চ্যানেল। এই চ্যানেলগুলি থেকে ব্লগিং ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন।

হেলথঃ আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনার ভালো জ্ঞান থাকে তবে আপনি এই হেলথ নিশটি বেছে নিতে পারেন। হেলথ নিশটি অনেক জনপ্রিয় একটি নিশ এবং এই নিশটিকে চির সবুজ নিশ বলা হয়। কারণ হেলথ নিশ নিয়ে একবার ভিডিও বানালে সেই ভিডিওটি দীর্ঘ দিন যাবত আপনাকে আয় দিয়ে যাবে। সাধারন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান, স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন টিপস, ব্যায়াম, ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমানো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে আপনার চ্যানেলটি শুরু করতে পারেন। ইউটিউবে স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচুর সার্চ হয় এবং এই নিশ থেকে খুব ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করা যায়। Everyday Health, Health Time একটি হেলথ নিশ চ্যানেল. এই চ্যানেলগুলি থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন।

ফিশঃ বর্তমানে ট্রেন্ডিং নিশ হিসেবে খুব জনপ্রিয় একটি নিশ হচ্ছে ফিশ বা মাছ। আপনি যদি মাছ ধরতে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন বা আপনি যদি গ্রামে থেকে থাকেন তবে আপনার জন্য সেরা একটি নিশ হতে পারে ফিশ। মাছ ধরার বিভিন্ন কৌশল, মাছ চাষের বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে আপনি আপনার চ্যানেল শুরু করতে পারেন। আমাদের বাংলাদেশে অনেকে আছে যারা মাছ ধরার ভিডিও বানিয়ে তাদের চ্যানেল থেকে মাসে কয়েক লক্ষাধিক টাকা আয় করছে। মাছের ভিডিও নিয়ে কাজ করলে সারা পৃথিবী থেকে ভিউ পাওয়া যায়, এই নিশ নিয়ে কাজ করার আরো একটি সুবিধা আছে তা হলো এই নিশের জন্য ইংরেজি ভাষা না জানলেও সারা পৃথিবীর ভিউ পাওয়া যায়। মাছ ধরার বিভিন্ন কৌশলের ভিডিওতে প্রচুর পরিমাণে ভিউ হয়। এই নিশে তুলনামূলক ভাবে বেশ ভালো আয় হয়। আর আপনারা যারা গ্রামে থাকে তাদের জন্য ফিশ পারফেক্ট একটি নিশ হতে পারে। Emma's Fishing একটি ফিশ চ্যানেল. এই চ্যানেল থেকে মাছ বিষয়ক ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন।

লাইফ হ্যাকঃ বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় নিশ হচ্ছে লাইফ হ্যাক। এই নিশ নিয়ে কাজ করলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চ্যানেল জনপ্রিয় হয় পাশাপাশি প্রচুর ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার পাওয়া যায়। লাইফ হ্যাক চ্যানেল গুলোর আয় তুলনামূলক ভাবে অন্য চ্যানেল থেকে বেশী কারন লাইফ হ্যাকের ভিউয়ার সারা পৃথিবী থেকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দাগ ওঠানো, অপ্রয়োজনীয় জিনিষের ব্যাবহার, একটি জিনিষের একাধিক ব্যাবহার, বিভিন্ন ক্রাফটের ব্যাবহার ইত্যাদি নিয়ে আপনি ভিডিও বানিয়ে আপনার চ্যানেলে শুরু করতে পারেন। লাইফ হ্যাক নিশ নিয়ে কাজ করলে আপনি তুলনামূলক ভাবে দ্রুত সফলতার মুখ দেখতে পারবেন। 5 Minutes Craft একটি খুব জনপ্রিয় লাইফ হ্যাক চ্যানেল, এই চ্যানেল থেকে ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন। 5 Minutes Craft ইউটিউবের শীর্ষ আয়কারী ১০ চ্যানেলের মধ্যে একটি এবং সাবস্ক্রাইবারের দিক থেকে সেরা ১০ এ অবস্থান করছে।

মিউজিকঃ আপনাকে যদি প্রশ্ন করি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশী সাবস্ক্রাইবার কোন চ্যানেলের? আপনি হয়তবা বলবেন pewdewpie চ্যানেলের কথা, pewdewpie চ্যানেলের দীর্ঘ দিনের একচ্ছত্র আধিপত্যকে শেষ করে সবচেয়ে বেশী সাবস্ক্রাইবড চ্যানেলের মুকুট পড়েছে ইন্ডিয়ার মিউজিক চ্যানেল টি সিরিজ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন একটি মিউজিক চ্যানেলের সফলতা কতটুকু। আপনি চাইলেই একটি মিউজিক চ্যানেল শুরু করতে পারেন এর জন্য আপনার স্টুডিও সেটআপের প্রয়োজন নেই, মধু কই কই বিষ খাওইলা গানটির কথা মনে আছে? জাহিদের গাওয়া গানটি কি রকম ভাইরাল হয়েছিল? আপনি বিখ্যাত গানগুলি নিজের গলায় কভার করতে পারেন, সামর্থ থাকলে মিউজিক ভিডিও বানাতে পারেন। মিউজিক চ্যানেল একবার দাড়িয়ে গেলে সাবস্ক্রাইবার খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। এমনকি নিজের মিউজিক চ্যানেল থেকে সেলিব্রেটি হয়ে যাওয়ার অনেক নজির আছে।

ট্রাভেলঃ আপনি যদি ঘুরতে ভালোবাসেন তবে আপনি খুব সহজেই একটি ট্রাভেল ব্লগ চ্যানেল খুলতে পারেন। ধরুন আপনি কক্সবাজারে ঘুরতে গেলেন আপনার এই ট্যুরের বেশ কয়েকটি ভিডিও আপনি আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন যেমন কোন গাড়ীতে যাবেন তার ভাড়া কত, কোন হোটেলে থাকবেন তার ভাড়া কত, কোথায় খাবেন, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন ইত্যাদি। আপনি বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাবার তথ্য দিয়ে, সেই সব স্থানের বিভিন্ন ভিডিও দিয়ে আপনার চ্যানেলটি শুরু করতে পারেন। গুগলে ট্রাভেল সম্পর্কিত বিষয়ে প্রচুর সার্চ হয় তাই এই ট্রাভেল চ্যানেলগুলো খুব তাড়াতাড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আমি এমনও দেখেছি যে উইকএন্ডে ঘুরতে ঘুরতেও একটি ট্রাভেল ব্লগ বানিয়ে ফেলেছে। Jack Harries একটি জনপ্রিয় ট্রাভেল চ্যানেল এই চ্যানেল থেকে ট্রাভেল বিষয়ক ভিডিও বানানোর আইডিয়া নিতে পারেন।

বিনোদনঃ বর্তমান সময়ে বিনোদনের একটা বড় মাধ্যম ইউটিউব, প্রতিদিন ইউটিউবে টোটাল যত ভিউ হয় তার বড় একটা অংশ ভিউ হয় ফানি ভিডিও, হাসির নাটক, কমেডি, জোকসের ভিডিওতে। আপনি চাইলেই একটি বিনোদনমূলক চ্যানেল খুলতে পারেন। বিনোদন মূলক চ্যানেলে এড থেকে আয় একটু কম হয় কিন্তু ভিউ হয় প্রচুর তাই এভারেজ একটি আয় চলে আসে। বিনোদন মূলক চ্যানেলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এই চ্যানেল থেকে নিজেকে একজন সেলিব্রেটি বানিয়ে ফেলা সম্ভব, বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ইউটিউবার তাদের বিনোদনমূলক চ্যানেল থেকে আজকে নিজেদের সেলিব্রেটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আপনি যদি ফানি বা মজার মানুষ হয়ে থাকেন তবে আপনি একটি বিনোদন মূলক চ্যানেল শুরু করতে পারেন।

মেকাপ বিউটিঃ এই নিশটি মূলত মেয়েদের জন্য বেশ কার্যকর, আপনি যদি মেকাপ বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন বা মেকাপ বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান থাকে তবে আপনি একটি মেকাপ বিষয়ক চ্যানেল খুলতে পারেন। গুগলে বিউটি টিপস নিয়ে প্রচুর সার্চ হয় তাই আপনি আপনার চ্যানেলে বিভিন্ন বিউটি টিপস, মেকাপ সম্পর্কিত ভিডিও আপলোড করতে পারেন। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও চাইলে এই নিশ নিয়ে কাজ করতে পারেন যেমন হেয়ার স্টাইল, ড্রেস ইত্যাদি নিয়ে ভিডিও দিতে পারেন।

মোটিভেশনাল ভিডিওঃ যদি প্যাসিভ ইনকামের জন্য ভালো কোন নিশ চান তবে মোটিভেশনাল ভিডিও একটি পারফেক্ট চয়েজ হতে পারে কারন এই নিশ নিয়ে ভিডিও বানালে আজ থেকে ১০ বছর পরেও এই ভিডিওর ভিউয়ার পাবেন। মোটিভেশনাল ভিডিও একটি এভারগ্রীন নিশ, ইদানিং লোকেরা ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি, অর্থ, নিজের জীবন, পড়াশুনা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে, আর তখন তারা ইউটিউবে অনুপ্রেরনামূলক ভিডিও দেখে। মোটিভেশনাল ভিডিওর চ্যানেলগুলি তুলনামূলক ভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়, sandeep maheshwari চ্যানেলটি একবার ঘুরে আসুন তাহলেই বুঝতে পারবেন তার এক একটি ভিডিওতে কেমন ভিউ হয়, এমনকি যখন তার চ্যানেল শুরু করে তখনকার সময়ের কয়েকটা ভিডিওর ভিউ দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন মোটিভেশনাল ভিডিও নিশের ক্ষমতা, এই নিশের ভিডিও থেকে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করা যায় এবং অনেক দীর্ঘ সময় টাকা আয় করা যায়।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো যে নিশ নিয়েই কাজ করেন না কেন আজকে চ্যানেল খুলে কালকেই হাজার হাজার ডলার আয় করার স্বপ্ন ইউটিউবে না দেখাই ভালো। একটা কথা মনে রাখবেন ইউটিউবে প্রতিদিন যেমন নতুন নতুন ইউজার বাড়ছে তেমন নতুন নতুন চ্যানেলও বাড়ছে সুতরাং এত চ্যানেলের মাঝে আপনাকে টিকে থাকতে হলে ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে তবেই সফলতা পাবেন। স্প্যামিং করে ইউটিউবে বেশিদিন টিকতে পারবেন না। আর হ্যা ইউটিউবকে আপনি ভালো কিছু দিন ইউটিউব আপনার মেধার সঠিক মূল্য দিবে।

100% বৃদ্ধি এবং অর্থের জন্য 7টি YouTube চ্যানেল আইডিয়া


আরো শিখুন


Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ